Sunday, May 19, 2019

রিমা দাস

 

অনির্দিষ্ট ঠিকানা

রিমা দাস


কলকাতার সত্তরের দশক । নতুন এক রাজনৈতিক চেতনার প্রতিষ্ঠায় তরুণ রক্ত সামাজিক শোষণের বিনিময়ে চায় সাম্যবাদ ।এই মতবাদের বিরুদ্ধে সর্বত্রই তাদের মুখোমুখি হতে হয় বিরোধের । ফলে অগ্নীগর্ভ কলকাতা । এমনিই একসময়ে পুলিসের চোখে ধূলো দিয়ে পার্টির উপর মহলের নির্দেশে এক রাতে শৌভিককে কলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে পালিয়ে যেতে হয় । ব্যবস্থা করে দেয় দলের অন্যতম এক সক্রিয় সহকর্মী অজয় । সে জলপাইগুড়ির ছেলে । চাকরী নিয়ে তার কলকাতায় আগমন । নিজের বিধবা মাসীর জলপাইগুড়ির এক প্রত্যন্ত গ্রামের পরিত্যাক্ত ভাঙাচোরা একচালায় সে শৌভিকের থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ।তিনজন জোতদার ও দু’জন কনস্টেবলকে খুনের অভিযোগের ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে মাস তিনেক হতে চলেছে শৌভিক এইখানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।কলকাতার একটা নামী কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক শৌভিকের এখন ছদ্মনাম প্রবীর । পুলিশ শিকারী কুকুরের মত হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে
চলেছে ।
#
পরবর্তী এ্যকশনের জন্য সন্ধ্যা নামলে বাবলু , মন্টু , বুড়ো, পটা একে একে বিড়াল পায়ে প্রবীর ওরফে শৌভিকের বর্তমান অনির্দিষ্ট ঠিকানায় জড়ো হয় ।ঘরের মাটিতে শতদরিদ্র এক চাটাইয়ের উপর মধ্যিখানে নীভু নীভু আলোর হ্যারিকেন জ্বালিয়ে মাঝারি সাইজের তোবড়ান এক কলাইকরা বাটিতে মুড়ি ও বাতাসা খেতে খেতে মৃদু স্বরে তাদের রাজনৈতিক শলাপরামর্শ চলে। আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন রান্নাঘরের পিছনের দরজা দিয়ে এগারো বছরের হারান এসে খবর দেয় – “শিগগিরি তোমরা পালাও। পুলিশ পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলছে” । সংবাদ দিয়েই সে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় । নিমেষে পাঁচজন উঠে দাঁড়িয়ে ত্রস্তপায়ে রান্নাঘরের পিছনের গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেবের জন্য দৌড়ে নিকষ কালো অন্ধকারে মিশে যায়। তখন প্রবীর তথা শৌভিকের একচালার দিকে ধেয়ে আসছে পুলিশের বেশ কিছু ভারী বুটের আওয়াজের সাথে হুইসেল। কিন্তু এসে তারা দেখে ঘরের মধ্যে খবরের কাগজের উপর লালকালি দিয়ে “চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান”, “শ্রেনীশত্রু খতম করো” লেখা প্ল্যাকারগুলো হাওয়ায় পতপত করতে করতে একোণা থেকে অন্য কোণায় উড়ে বেড়াচ্ছে ।আর শতছিন্ন চ্যাটাইয়ের উপর কাত হয়ে পড়ে আছে একটা কলাইকরা বাটি ।তার থেকে গড়াগড়ি যাচ্ছে কিছু মুড়ি ও বাতাসা ।

No comments:

Post a Comment

সূচীপত্র

সম্পাদকীয় দেহ্‌লিজের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ হলো অনুবাদ Agni Roy ...