Sunday, May 19, 2019

প্রশান্ত বারিক


প্রশান্ত বারিকের কবিতা


প্রশান্ত বারিক




এক

তোমার কথা বলতে গিয়ে
ভাষাহীন হলাম
মেঘের ডাকে গুমরে কেঁদে উঠল বাঘ
স্মৃতি বড়ই বেদনা বিধুর
 
দুই

এ কোথায় এলাম
এ আমার ঘর নয়
বসত বাগানে সার সার কবর
চিতা জ্বলে
আগুন হালকা চোখে মুখে ঢোকে
এ আমি কোথায় এলাম

গৃৃৃৃধ-শেয়াল হায়নারা
জবাব দ্যায়না কোনো
নারী ও শিশুর দেহ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়
ছিনাঝাপটি করে গরগরায়......

তিন

আদিগন্ত সর্ষে খেতের উপর ঢেউ বয়ে যায়
ফুলে ফুলে মগ্ন মৌমাছি
নিরিবিলি বাঁধের আড়ালে
টিনএজ ছেলেটি মেয়েটি
চোখে নেয় পরস্পরের ওম
ঘূর্ণি হাওয়ায় শিমুলের বীজ ওড়ে
আলাহ্দিত কৃকলাস
ঘাসের ডগার থেকে সুস্বাদু রসায়ন
টেনে নেয় জিহ্বায়

চার

একটা পুরুষ বাইসনকে ঘিরে আছে  হায়নার দল
গোলবদ্ধ তারা চতুর ক্ষিপ্রতায়
খাবলা খাবলা ছিঁড়ে নিচ্ছে তার জ্যান্ত শরীর
বাইসনের দল তফাতে দাঁড়িয়ে দেখছে
পুরুষ বাইসনের অসহজ মোর যাওয়া
অথচ সিং বাগিয়ে তেড়ে আসছেনা কেউই

পাঁচ
স্বপ্নসুন্দরীর স্বপ্ন ছিঁড়ে গ্যালো
ঝম ঝম শ্রাবনের রাতে
তার ফোলা ফোলা ঠোঁটে
চুমা খাবে বলে
কড়িকাঠ বেয়ে কালসাপ নেমে আসে ধীরে
জেগেওটা সুন্দরীর মৌন আগুনে
পুড়ে গেল সে

ছয়

বুলবুলি তুমি কাকে ডাকছো
তোমার সুরেলা ডাক শোনার সময়
আষাঢ়র এই ভ্যাপসা গরমে
কাঁঠাল পেকে উঠছে কোথাও
আমিও তো পেকে উঠছি ধীরে
বিজবিজে   ঘামে ভেজা রুপোলি বুকে
পিঁঁপড়রা নির্ভয় হেঁটে চলে যায়
আদুল গা শিরশির শিরশির করে
উড়ু উড়ু মন তোমায় ছুঁতে চায়

সাত

পাথর বুকে কান্না জমে আছে
আমাকে খুঁড়ে কতটা গভীরে গেলে
জল পাবে
গাছেদের কাছে  জেনে নও তুমি

অপরাজেয় হওয়ার বাসনায়
ফুলেদের কাছে যায় মৌমাছি
শ্রমদান মহাদান
তাদের পুণ্যের মহার্ঘ নিয়ে
শীৎকার কুহর তোলে রানী

আঠ

মাঝ সমুদ্রে হটাৎ ঝাঁপিয়ে পড়লে
ডিঙি নৌকায় একাএক তুমি
তোমার খোলা চুল
ভেজা শরীর নিয়ে
ছিনিমিনি খেলবে নোনা বাতাস
তাই কালো ঢেউয়ের বুকে
পা রাখতে ভয় পাই আমি

নয়
ঘরের মধ্যে ছায়ারা নড়ছেন
আমাকে কিছু বলছেন তাঁরা
আমি বুঝতে পারছি না
গুরু-মাতা-পিতা-বন্ধু কত জ্ঞানীজন --
নাগালের বাইরে তাঁরা আজ ছায়া ছায়াময়
বুকে জ্যৈষ্ঠের ধুধু লাল মাঠ,
তীক্ষ্ণ রেললাইন -
নদীর ওপার  থেকে হাতছানি দিল কেউ -
কতদিন আর বেঁধে রাখবে ?
তোমার লাল হলুদ আঁচল ছায়ায় !

দস

(সমীরণ মজুমদার শ্রদ্ধাভানেষু )

পাতা ঝরে  নেমে এলো জলের গভীরে
জল কি তবে প্রতীক্ষায় ছিল ?
স্বপ্নঘুম ভেঙে গ্যালো বিছের দংশনে
ঠাঠা রোদে দাঁড়িয়ে এক শুন্য করতল -
প্যান্টের উপর ঝোলা পাঞ্জাবি মেধাবীজে ভরা ঝোলাব্যাগ কাঁধে
একজন শালপ্রাংশু তীক্ষ্ণ পুরুষ -
বাইফোকাল চশমার ভিতর থেকে আমাকে স্ক্যান করে দ্রুতপায়ে চলে গেলেন দূরে ---
আমি তার চলে যাওয়া পথের দিকে চেয়ে
দাঁড়িয়ে আছি স্তব্দ একা











No comments:

Post a Comment

সূচীপত্র

সম্পাদকীয় দেহ্‌লিজের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ হলো অনুবাদ Agni Roy ...