Sunday, May 26, 2019

দেহ্‌লিজের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ হলো


পীযূষকান্তি বিশ্বাস



দেহ্‌লিজের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ হলো । যতটা না ছিলো গুটি গুটি পা, নিন্দুকের চোখে বন্দুক রেখে ততটাই রুখে দাঁড়ায় বারুদবরণ আরবল্লি রিজ । ওখানে গ্রীষ্ম, ওখানে বর্ষা । ওখানে সাতচল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড । তবুও পত্রে পত্রে সবুজের প্রজ্বলিত আভা, কণ্টকময় বৃক্ষের রুক্ষ প্রশাখায় নীড় বাঁধে তবুও বিহঙ্গ - সযত্নে ডিম পাড়ে , যারা নিজেরাই কোন একসময় ঘুমন্ত ছিলো উক্ত ডিমের ভিতরে । অভিভাবকহীন বেড়ে ওঠা এই সাহিত্যপত্র ।  মালিকানাহীন বঞ্জর পানিপথে যখন যমুনা ছুটেছে একলা, কোন আফগানী শেরশাহ এইসব বৃক্ষের গায়ে এঁকে দিলেন শিলমোহর । গ্র্যাডিয়েন্ট বরাবর ক্রমশ ছুটে যাওয়া সমগ্র মুঘল বাহিনী, ধুলোয় ভরে ওঠা মেহরাম-নগর । অস্পষ্ট হয়ে আসে দিল্লির শতাব্দী পুরানো খাপ । চারিদিকে আকাশচুম্বী বাড়ি, ব্যস্ত সড়কে বেড়ে ওঠা গতিবেগের প্রতিযোগিতা,  জমি দখলের লড়াই ।   এর ভিতর জন্ম নিলো দেহ্‌লিজ, যার নিজস্ব শরীর দিয়ে তৈরি নিজেরই তোরণ, যার নিজস্ব গতি দিয়ে সামান্য এই সাহিত্য যাত্রা  । যে কেউ আরোহী এর হতে পারেন, যে কেও সারথী । এই পুরানো ইটের চাতাল, এই রুক্ষ প্রেমের বুদ্ধ-জয়ন্তী পার্ক,  আবহাওয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে দেহ্‌লিজের সহবস্থান ।  যে কেউ হতে পারেন দেহ্‌লিজ । দেহ্‌লিজ মানে সারভাইভ্যাল, ভৌগলিক চেতনার অভিপ্রকাশ,  দেহ্‌লিজ মানে সবুজের হাতছানি, মুহূর্তযাপনের নাগরিক চিত্রকল্প, র‍্যাটরেসের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে বেরোনো ব্যাঘ্র শাবক ।



দিল্লির সাহিত্য জগত বলে নানান বিভ্রান্তি আছে । দিল্লির বাংলা সাহিত্য নিয়ে আরো বিভ্রান্তি । সাহিত্যে ভাষার এটাচ করা যায় না । নাকি যায় ? সাহিত্যে শহরও এটাচ করা যায় না । নাকি যায় ? কত কিছুই তো করা যায় না । কেউ কেউ বলছে যায় ।  খাণ্ডবদাহে যখন পুড়ে যাওয়া জঙ্গল একটা বিশ্বাস মাত্র । ইন্দ্রপ্রস্থ একটা বিশ্বাস । কি বলছেন , বিশ্বাস তো । সেই রকম  বিন্দু বিন্দু রেখা একটা বিশ্বাস, দ্রাঘিমা একটা বিশ্বাস । সময় ? সময় তো একটা বিশ্বাস !  সময় অনেক কিছু বদলে দেয়, সময় অনেক কিছু নির্ধারণ করে । দুটি সংখ্যা প্রকাশ হবার পরে যারা চিল চিতকার করে বলছিলো, দেহ্‌লিজ টিকবে না । দিল্লির সাহিত্যপিপাসু জনতা নিজেরাই নিজেদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলো । মাথার উপর একটা টুপি পেয়েই যাদের ধ্যান ধারনা ছিলো এটাই একমাত্র আচ্ছাদন, তারা জানতেই পারেনি যে তাদের মাথার উপর একটা ছাতার প্রয়োজন । পঞ্চাশ বছর ধরে তারা টুপি পরে আসছেন । টুপি পরে তারা আয়নার দিয়ে তাকাচ্ছেন, আহ্লাদিত হচ্ছেন ।  টুপি তাদের বড়ই প্রিয়, টুপি যারা পরাচ্ছেন, তাদেরকে ওরা জয়ধ্বনি করছেন ।



যে কোন শহরের এই চরিত্র হতে পারে । গ্রাম কেটে শহরে পাড়ি দেন জনপ্রবাহ ।  শহরের নিজের কোন নন্দন-তত্ব থাকে না । আপাত দৃষ্টিতে, তার কোন ব্যথা, দুঃখ, বিষাদ নেই । তার চোখে এক উদাসীনতা, তার অধরে এক ধুসর জগতের শুষ্কতা , যার চোখের পাতায় পাতায় এক ক্রমবিকাশের রক্তক্ষরন । তার কান্না নাই । আগুনে ঝলসে ওঠে লাল কোট, পানিপথের বুকে দ্রুত শুকোতে থাকা যমুনা , কোন সম্রাট জাহাঙ্গীর বুঝি তার বজরা নিয়ে পৌঁছাবেন না কালিন্দিকুঞ্জের ঘাটে । আগুন নিয়ে খেলতে থাকেন আজকের শিশু, আবহাওয়ায় জ্বলতে থাকে দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস । দিল্লির পথে পথে পড়ে আছে সেই ইতিহাস চিহ্ন, রাজঘাটে সমাধি হয়ে জ্বলতে থাকেন মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী ।  


কি গল্প হবে  ? কাহিনীর বিপরীতে চাইতো এক খলনায়ক । যার অভিঘাতে রাখা হবে একটি তরমুজ কাটার আখ্যান । সর্বহারার সার্বভৌমতা ।  কোমল ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হবে কড়ি,  শৈশবের অপূর্ণ অভিলাষ, কৈশোরের প্রেম নিবেদনের ব্যর্থতা, যৌবনের বাংলা , মধ্যমেধার বাঙ্গালি ও বিষয় বিবেচনায় সমাজসেবা ।  হায় ! সেই রামও নাই , সেই রাবণ ও । ইংরাজ বিদায় নিয়েছে, তাই সেই স্লোগানও আর নাই । হায় থ্যানোস - কি লিখি তোমায় ?  গ্যালাক্সির অর্ধ জনসংখ্যার আচমকা হ্রাস কোন কাব্যরস হতে পারে না ।  কোন রূপ রস গন্ধ হতে পারে না । কাব্যকথার জন্য যা চরমভাবে প্রয়োজনীয় । যদি ধরা হয়, আর ২৮ কোটি বাঙালি, অর্ধ জনসংখ্যা ১৪ কোটি । যাদেরকে আমরা ধরে নিতে পারি যে, তাদের কাছে একটি স্মার্ট ফোন আছে । মানে, প্রত্যেকের কাছে একটি একটি ফেসবুক অ্যাপলিকেশন রয়েছে । এইমতো অবস্থায়, প্রত্যেক ফোনের মালিক হবেন একজন বাংলা সাহিত্যের পাঠক । এবং  সে একটি গল্প চায় ।


এইভাবে দেহ্‌লিজে গল্প ফিরে আসে । দেহ্‌লিজ একটি ওয়েব ম্যাগাজিন ।  ওয়েব পালটে ফেলছে জালবপনের সীমানা । ক্রিয়েটিভ লেখনীর ভৌগলিক চরিত্র মাল্টিপ্লাই করছে ভাইরাসের গতিতে । দেহ্‌লিজ সেখানে চাইছে, নিজস্ব পরিচয় । নিজের রক্তের ভিতর ঘুরতে থাকা এক বিশ্ব । নিজের আবর্তনে বুঝে নিতে চায় অস্তিত্ব । যেভাবে দিল্লি ফিরে আসে গল্পে । সহস্রবছরের দিল্লি, খাণ্ডবদাহের আগুনখেলা, ময়দানবের ইন্দ্রপ্রস্থ,  অনঙ্গপালের লাল-কোট, চৌহান রাজের রাই কিলা পিথোরা । ইলতুতমিসের কুতুবমিনার । শূন্যকালের পরে যদিও কোন কাল থাকে না । গল্প তো এক প্রবহমান । না আশীর্বাদ, না অভিশাপ । মহানগরীর চরিত্রে এক নাটক বদল । দেহ্‌লিজ স্ট্যান্স নেয় সেই ব্যস্ত বাজারে । রাজপথে ওলা, উবের, সি এন জি অটোদের ভিড় । প্রেস কর্নারে চুটিয়ে চলছে রাজধানীর রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডা , দিল্লি হাটে বিদেশী পসরার বিকিকিনি ।  দিল্লি হাটার্সদের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে তরুণ প্রজন্মের দেহ্‌লিজ ।



দিল্লি এক অদ্ভুত শহর । লাল কিলার পাথর ছুঁয়ে দেখি - এক ইতিহাসের মর্মরধ্বনি । দিল্লির সেই গল্পের কোন ঘাটতি নেই ।  দেহ্‌লিজের কাছে তার এই প্রার্থনা , দিল্লির নিজস্ব চরিত্র, রূপ, রং, পান, পিক, দেওয়াল, অট্টালিকা এই হোক তার সাহিত্য অনুষঙ্গ । যে রক্ত এতদিন ধুয়েছে গঙ্গা অববাহিকার বিন্দু জল, তাতে মিশে যাক যমুনার কালো । যাকে আমরা মঞ্জিল বলে মানিনি, যাকে আমরা ভাগ্য বলে গ্রহণ করিনি, অথচ খাদ্য বস্ত্রের সন্ধানে মাইগ্রেশন করে আমাদের পার করে আসতে হয়েছে শোন, সরযূ ফল্গু ।  এই এত দূর, দিল্লি দিলওয়ালোঁ কা শেহ্‌র । আমাদের রক্তে ক্রমশ প্রবেশ করছে - সারভাইভাল, আমাদের রক্তে মিশে যাচ্ছে বিজাতীয় জাতীয়তাবোধ । মননে, চিন্তনে রং ধরেছে দিল্লির ধূসরতা,  চেতনায় ফুটে উঠেছে ইন্দ্রপ্রস্থের সবুজ । দেহ্‌লিজ চায় তাদের একাত্ম করতে । যে কোন পরবাসে অবশ্যম্ভাবী দেওয়াললিখনকে গ্রহণ করার নাম ভাগ্য, আর তাকে ভালোবাসে আপন করে নেওয়ার নাম দেহ্‌লিজ ।  সাহিত্য ধারনার এই ভঙ্গুর কিনারায় বসে আমরা দেখতে চাই তার ঐতিহাসিক উত্তরণ ।   





Courtesy: 
All pictures are fusion work, consisting... Belgian Surrealist artist René Magritte's (1898 - 1967) paintings and Delhi's archeological photographs

DEHLIJ.COM a web magazine run by the group of poets from New Delhi. The credits are affiliated to Bengali, Hindi and English poets from this subcontinent. 

Contacts :
Email : poet.area@gmail.com
Phone : +91 9871603930 (Pijush Biswas)
Phone : +91 8800321505 (Monali Roy)
WhatsApp: https://chat.whatsapp.com/KC7rlh3e6vi2y9sHuj6rhZ
Website: https://www.dehlij.com




8 comments:

  1. এ তো দিল্লির আত্মকথন, সে বাঙালি বা অন্য কিছু তাতে কী এসে যায়। যখন তা বাঙালি আবেগে স্রোতস্বিনী তখন তা ১৪ কোটি বাঙালির মন ছুঁয়ে অসাধারণ হয়ে ওঠে। জিও পীযূ, জিন্দাবাদ দেহলিজ।

    ReplyDelete
  2. খুব সংবেদনশীল লেখা

    ReplyDelete
  3. shohorer nijer kono nandan tatwo thakena. ki sotyi!!!

    ReplyDelete
  4. খুব গভীর আর অন্তর থেকে লেখা। ভাল লাগল।

    ReplyDelete
  5. একটা গদ‍্য, যা কবিতা শোনায়।

    ReplyDelete
  6. পড়লাম, অসাধারণ কাব্যগদ্য

    ReplyDelete
  7. লেখাটি চমৎকার। একটা সাজেশন, যারা লেখা পাঠাবেন তাদের একটা সময়সীমার অপেক্ষা না করতে বলে দেওয়া ভাল। সেটা তিন, ছয়, বারো মাস, যাই হোক।

    ReplyDelete

সূচীপত্র

সম্পাদকীয় দেহ্‌লিজের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ হলো অনুবাদ Agni Roy ...