Sunday, May 19, 2019

ঔরশীষ ঘোষ

 

ট্যুরিজমের ব্যানার দেখি ঝুলে আছে গাছে


ঔরশীষ ঘোষ



গোপন সুড়ঙ্গপথ ধরে বয়ে চলেছি অনর্গল
এখন সমস্ত কিছুই ধূসর,  যেন এক মৃতের
শহরে পার করছি অসীম কালোয়
যেখানে উৎসব চলে, প্রেত আর পিশাচীর দল
গমগম করে সব বিলাসবহুল রুফটপে,
আমি যতবার ক্লান্ত চোখে সেইদিকে তাকিয়েছি
চিতার আগুন জ্বলে উঠেছে খুলির ভেতর
তখন দিল্লির আমোদ নিতে চলে আসি হজখাস
বা লোদী রোডের কোনও মামুলি রেস্তোরাঁয়
চিলড বিয়র সহযোগে সাহিত্যের দুর্দিন নিয়ে
আলোচনা চলে, দু-চারটে আহা উুহু, চুক-চুক,
অথবা মৃণাল সেনের মৃত্যু ঘিরে জমে ওঠে
গভীর আড্ডা, অন্যদিকে পাকিস্তান পিছু হটে
ভোটের বাজার এক্কেবারে গরম করেছে
এখন গ্রীষ্মের রুহু বাতাসেও যুদ্ধের গুজব
অসহ্য বমনেচ্ছা চেপে রেখে কয়েকজন কৃষক
ফুলের স্তবক তুলে দিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে
নিউজ চ্যানেলে এই সব দেখতে দেখতে
নিঃশেষিত হয়ে যায় আরো একটি দিন
পাখির পুরীষ লেগে থাকে চশমার কাঁচে


এভাবে বাঁচার জন্য মেধার প্রয়োজন নেই
কত ধানে কত ক্ষেত, কত কাটা কত দরে
এসব সহজ আঁক কষে, কবি আর সম্পাদক কত
ডুব দিল মগজের অতল নীরবে
যেখানে চুলার আঁচ সেদ্ধ করে সমস্ত দ্রষ্টব্য
নেহাত বাঁচার জন্য জ্যান্ত হয়ে থাকা
ঘড়ি কাঁটায় ফু দিয়ে পার করে দেওয়া জন্মদিন

রাস্তায় জোকার সেজে ম্যাজিক অনেক দেখিয়েছি
নানান ভুলের পথ ধরে বিপথগামীর বন্ধু হই
এখানে শ্মশান ছিল গতকাল, আজ মাল্টিপ্লেক্স
এভাবেই গড়ে ওঠে  বিষাদ ও সভ্যতার ফুল

সেই ফুল ছিঁড়ে এনে রমণীর খোঁপায় সাজাই
চিরস্থায়ী হও তুমি শরীরে উল্কির মত
নদীমাতৃকতা ভুলে ধোঁয়ার কুয়াশায় হারিয়েছ
জীবনের ম্যারাথনে তোমার বিরতি ঘনঘোর


এমন জীবন চাই বন্ধু, আত্মঘাতে সহসা প্রস্তুত
গ্রেনেডের মালা গলায় জড়িয়ে চাঁদের আলোয়
ফিরে আসি খিদের গভীর কোনও খিদে নিয়ে
তখন ভ্রমের দেশে ভেসে যায় জখমি জাহাজ
সোহাগের লাল ছুঁয়ে তারও দাবী দেহ্‌লিজ
নুন আর পাথরের অবাক দুনিয়া
যেখানে
জলের গান
মিশে যায় মৃত ওষ্ঠ
থেকে ভেসে আসা ক্ষীণ গোঙানির সুরে


অথচ অবাক এই প্রলোভন
হাতে পায়ে বেঁধে রাখা নানারঙা সুতোর আগল
খাঁচার পাখির মত নিয়মানুবর্তিতায়
প্রতিদিন গাছের গুঁড়ির মত নিঃসাড় হয়েছি
এই শহরেই ছিল বাদশাহি আমোদের
কালো ইতিহাস... খুনি আর ব্যভিচারী
চাঁদ কি আজ এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাজী!
প্রতিটি তীর্থের পাশে জমা ভিখিরি ও বেশ্যার
অবৈধ আশ্রমে, আজ আমি কোন ধর্ম মানি প্রভু?
নরকের ফুল হয়ে তোমার বাগানে বিচরণ
করি কত কাল, শহরের সব অন্ধকারে দেখি
এক ছায়া... কুঁজো লম্বা একটা ছায়া,
চেয়ে আছে। আমার সমস্ত উৎসবে মিশে যাচ্ছে
তার চোখ থেকে ঝরতে থাকা লালা
যেন সবসময় কয়েকটি মাকড়সা জামার ভেতর
ছোটাছুটি করছে... যেন সূক্ষ্ম ইস্পাতের টানে
কেউ চিরে দিচ্ছে চোখের পলক


তবু দুরূহের মত এক অস্ফুট গোঙানি হয়ে
গলা চিরে উঠে আসে মদ আর রক্ত, এই ব্যর্থতা
বোবা আঘাতের মত চামড়ায় দাগ রেখে যায়
যেন চেন ছেঁড়া কুকুরের মত নিজের পেচ্ছাপের
গন্ধ খুঁজে আশ্রয় খুঁজছি, খাবার খুঁজছি, যত্ন...
তাই বারবার এই ফিরে আসা নতুন আড্ডায়
একে অপরের হাতে তুলে দেওয়া ফুল আর ছুরি
নতুন লোকের মুখে লেগে থাকা পুরানো বাড়ির
গন্ধ, চেনা রান্না আর অচেনা আদর দেখে
হাসিমুখে ফিরে আসা বন্ধঘরে, যেখানে রঙিন
কোনও ক্যালেন্ডারে আঁকা আছে ছুটির হুল্লোড়
এই তো ভ্রমণ... বাড়ি থেকে অফিসের পথে
ট্যুরিজমের ব্যানার দেখি ঝুলে আছে গাছে


এই রুখা শহরের রাস্তায় সূর্যের ভাপে মিশে আছে
কোনও অচেনা জন্তুর গর্জন, যেন প্রাচীন মিথের
পৃষ্ঠা থেকে উঠে আসা এক সহস্র মুখের সাপ
ছোবল দিচ্ছে বাতাসে। কাছে দূরে মুমুক্ষার ভিড়ে
আত্মহারা দাঁড়িয়েছি। অফিস আওয়ার ভুলে
মেলের পাহাড় আর টার্গেটের এভার গ্রোয়িং
কার্ভ ধরে চলে এসেছি শহরের হৃদপিণ্ডে...
চতুর্দিকে হট্টগোল... কেউ বলছে লেবু জল চাই
কেউ জানতে চাইছে ট্যাটু করাবো কিনা,
এক যৌনরোগের ওষুধ বিক্রেতা ও বেলুনওয়ালার
মধ্যখানে ঘুরপাক খাচ্ছি যেন একই টানেল ধরে
হিপহপে সাজা ম্যানিক্যুইনের দল পিছু নিচ্ছে
একজন খেলনা বিক্রেতা খাঁচার ভেতর রাখা
প্লাস্টিকের পাখির দাঁড়ে দিচ্ছে ছোলা আর জল
সে আমাকে ছুটির পথ দেখানোর নামে
সুসজ্জিত পাবের দরজার দিকে ইঙ্গিত করলো
ওই দরজা দিয়ে বেড়িয়ে আসতে দেখলাম
এক অল্পবয়সী রাশিয়ান এসকর্টের হাত ধরে
অতি কদাকার গুজরাটিকে, নির্ঘাত ওদের আজ
ছুটির দিন। এরপর যাকেই প্রশ্ন করেছি, কেউ
আমায় জি.বি রোডের দিকে যেতে নির্দেশ দিয়েছে
কেউ হাত দেখিয়েছি দরগার দিক। আমার
যাওয়া হয়নি কোথাও। ম্যানিক্যুইনের মিছিল নিয়ে
আমি ঘুরে চলেছি সেন্ট্রাল পার্কের চতুর্দিকে
এক সম্মোহিত জানোয়ারের মত

কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না
কিন্তু কিছুতেই হারিয়ে যাচ্ছি না
শুধু ছেঁড়া লিফলেটে এঁকে রাখা কোনও
নিখোঁজ মানুষের মুখ হয়ে ভেসে যাচ্ছি হাওয়ার ধাক্কায়।

1 comment:

সূচীপত্র

সম্পাদকীয় দেহ্‌লিজের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ হলো অনুবাদ Agni Roy ...