Friday, May 24, 2019

পীযূষকান্তি বিশ্বাস


চুড়ি টুটি



এইখানে লাঙলের পয়া বরাবর লাল ঠোটের ধবল বক,
আলের পাশে
চাষবাস যখন অযান্ত্রিক বৈদিক প্রাচীন
আকাশের থেকে উঁকিঝুঁকি দিলে পাপ্পানকালান
এই চানা ক্ষেত জুড়ে জোরাজুরি
রাধিকা ক্রমশ আসে এই একবিংশ শতাব্দীর
চুড়িটুটির মাঠ, এই ক্ষেত খামার জুড়ে এতটা কঙ্কর
লাল, ঝামা, রেত মিলে দেওয়াল উঠে গেলে আকাশচুম্বী
সদ্য পেরোনো সোলাংকী কন্যা পিঠে বেণী দুলিয়ে
দক্ষিণ দিশা বরাবর টেক-অফ করে যাওয়া ইন্ডিগো-বোয়িং দেখে
হলুদ রাই ক্ষেতের দিকে তার নিঃসংকোচ চুন্নি উড়ে যায়

এই সময় বয়স হলো যখন স্কুল যাবার, দমদমা লেক
পাখিদের আনাগোনা
উড়ে যেতে চাওয়া হাওয়া আর ললনার সদ্য বুকে জমে ওঠা সৌরভ
অথচ এই বর্ষার দিনে বর্ষা নাই
ঋতুর আগমন দিয়ে তেল দিক সরষে
নাগরিক জীবনের ক্লেদ ঘাম নিয়ে ঈষৎ লবণাক্ত ছোলার ক্ষেত
অপেক্ষারত জাঠ যুবক দিল্লির এক কড়ক লন্ডা
যার উপর দিয়ে ফাইবার অপটিক্সের কেবল
যার মধ্য দিয়ে অন্তর্জাতের আই পি প্যাকেট
যার  ভিতরে গুমটে রয়েছে সাইবার ভিডিও
যার দৃশ্যে রয়েছে পর্ণগ্রাফির কামশট
দ্বারকা সম্পূর্ণ পুনর্বাসন হবার ঈষৎ পরেই
গুটিকয় হোমো-সেপিইয়েনসদের আচমকাই মনে হলো
মাসকলাইয়ের লতানো গাছে আটকে গেছে নাবালিকা
রাধিকা সোলাংকীর ব্যবহৃত ছিন্নভিন্ন রেশম অন্তর্বাস


এতটাও তো স্বনির্ভর নয় এই জিন্দেগী
গল্পাশ্রয়ী এই মুকুন্দ ভিলায় পড়ে যায়
অন্য ভাষার অন্য কবিতা
রাস্তা, ইট, নালা ছাড়া এই ভিরানায় কবি কে বা
কংক্রিটের চাতাল ফাটিয়ে মহানিম ছাড়ায় যে ডালপালা
এই আঁধার ঘনিয়ে আসে শস্যখেত জুড়ে 
এই পাপ্পানকালানের শেষ নাগরিক হেটে যাওয়া অব্দি
দ্বারকার শেষ শস্য ঘরে যাওয়া অব্দি
সেক্টর আট থেকে সেক্টর বিশ
এক এপার্টমেন্ট থেকে অন্য এপার্টমেন্ট
মানুষের মাপে এই পৃথিবী দৈর্ঘ্য মেপে যাই
মানুষের মাপে এই পৃথিবী প্রস্থ মেপে যাই
মানুষ আর শস্যের দংগলে
মানচিত্রে বারবার বদলে আসে রং, রেখা, কনট্যুর
জন্ম থেকে জন্মে ঘিরে ফেলেছে নির্বাক চিত্রকল্প

শতজন্মের ভিতর থাকে যে সব অন্যরকম বলা
অন্যরকম ভাষার নতুন নদীমাঠ
সেই ধানিজমি, টিয়া পাখির ঝাঁক, ছোলার ক্ষেতের উপর
রাধিকা কোনদিন বিবাহযোগ্যার মত পূর্ণযৌবনা হবে
তার হাতে লাল লাল চুড়ি,
তার পরনে হালকা পাড়ে নীল শাড়ি
অথচ সে আজ কোন সোলাংকী ললনা
বারবার দেবরাজ বধূর মত কোন লাজুক
যে যেদিকে পারে আগুন হয়ে ওঠে
যে যেদিকে পারে মাঠ পুড়ে যায় অনর্গল
পুড়ছে  প্রতিযোগিতা থেকে উঠে আসা কোন রাই ক্ষেত হলুদ
ফ্ল্যাটবাড়িকে ছেড়ে দিয়ে ছাই হয়ে যাওয়া গাঁও
এই নগরীর আষ্টেপৃষ্ঠে মানুষের শৃঙ্খল,
যান্ত্রিক গল্পের সংরক্ষণে এই নগরীর পরিখায়
মৃত কোন সাতভাইদের হাড় কংকাল
কোন পারুল বোন বুঝি আর তাদের ডাকতে এলো না

এতটাই কি ছিলো তোমাদের এই মেরুন প্রিয়তা
কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদের মতো সেজে উঠেছে প্রপার্টি ডিলার 
হরিৎ গমের ক্ষেতের উপর জোড়া শালিকের সংগম
তোমাদের অসহ্য মনে হলো
সবুজকে নিশ্চিহ্ন করে ইটের ইমারত
কোঠাবাড়ি, সুরম্য অট্টালিকা, হাইরাইজ ফ্লাটস
কাতারে কাতারে উৎপাদিত মানুষ আর শস্য
মানুষের পণ্য নিয়ে মানুষ বিক্রি করে মকান ডট কম,
মানুষ ইট হয়,
মানুষ চুন হয়,
মানুষ ইটালিয়ান মার্বেল
বৃদ্ধ সোলাংকীর মাংস, ঘাম, পুঁজ  লাশ পচে গেলে মিশিয়ে মাটিতে
উর্বর হয়ে ওঠে ল্যাটেরাইট
এই বর্ষা চলে গেলো, কোন বারীষ নেই
মানুষকে খাচ্ছে আজ লতানো বীরুত
অথচ
যে কোন সবুজের চেয়ে আর মাংসাশী মানুষের উৎপাদন বেশী

তবু যদি দেখো, গল্পের শুরু
তার চলন, বাঁকা বা স্পীড ব্রেকার
এই এক রৈখিক হাইওয়ের মত কোন যাত্রা
রাস্তার ঝাঁকুনি নিয়ে চালকের মনে সংশয়
কবির মনে বসে থাকা কোন চেতনায় তার সিনট্যাক্স ভেঙে যায়
কলাই থেকে চুড়ি ভেঙে যায়
সদ্য কৈশোর পেরোনো রাধিকা স্কুলে যায় সবুজ সালোয়ার কামিজে
তার সদ্য বুঝি আর পেরোয় না
তার সদ্য থামিয়ে দিয়েছে এই মে জুনের দিল্লি
এয়ারপোর্টের মেট্রো এই থমকে দাঁড়ালো ,
লো-রাইড বাস এই রুখকে
মানুষ আর কংকাল নিয়ে সমগ্র দ্বারকা
চারিদিকে ঘিরে আসে গম কেটে আগুন লাগানো ধোঁয়া
দূষিত নিঃশ্বাস-সহ দ্বারকা সেক্টর ওয়ান এক্সটেনশন
পালাম ফ্লাইওভারে সমগ্র ট্রাফিক আজ থমকে দাঁড়িয়ে...


এইখানে ফিরে আসা মানে,
ধনুকে ফিরে আসা তীর
লিখে ফেলা কবিতা থেকে চেতনা আলাদা করা
কবিকে মানুষ থেকে
মানুষকে কবিতার থেকে দূর
দ্বারকা এমন এক নগরী, যার কোন ফিরে আসা নেই
পিচের সড়ক থেকে ছোলার সবুজ ক্ষেত
এও তো যাত্রা
যার যদিও কোন ট্রেল নেই, সুতরাং
নাল এন্ড ভয়েড
কোন সদ্য বিধবা রাধিকার চুড়ি ভাঙ্গার পর
চুড়িটুটির এই মাঠে একটা কিংফিশার বোয়িং ভেঙে পড়লো বুঝি
এই কবিতা পাঠের নিমিত্তে 
দুপাতা সবুজ সহ কোন দূর্বাও বুঝি অবশিষ্ট নেই  !

1 comment:

সূচীপত্র

সম্পাদকীয় দেহ্‌লিজের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ হলো অনুবাদ Agni Roy ...